দেশের প্রায় সব জেলায়ই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। বর্তমানে পাটের উৎপাদন ও পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। অনেকে পাট ও পাটপণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করে ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন। ফলে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে পাট।
বর্তমানে দেশে পাটচাষির সংখ্যা ৪০ লাখ। পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষ পণ্য’ ঘোষণা করেছে সরকার। লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানো। কিন্তু এবছরই পাটের মান ও দামে অখুশি কৃষক। অধিকাংশ এলাকায় পচনপানির অভাবে পাটের রং হচ্ছে কালো বা ফ্যাকাশে।
এতে দাম কমে লোকসান গুনছেন চাষিরা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। এবছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটবীজ বপনের সময় বৃষ্টির দেখা পাননি চাষিরা। এতে অনেকে বাধ্য হয়ে দেরিতে পাট লাগিয়েছেন।
আবার পাট কাঁটার সময় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি ছিল না। পুকুর-ডোবা শুকনো থাকায় পচনপানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এখন কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। বিক্রি করে কোনো লাভ থাকছে না। বরং প্রতি মণে দুই-চারশো টাকা লোকসান হচ্ছে। পাট চাষের অর্থনীতি এমনিতেই জটিল। এবার জমি চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ, নিড়ানি, টানা-বাছা, পাট কাটা, জাগ দেওয়া, নোয়া ধোয়া, ভ্যানভাড়া, শুকানো-সব মিলিয়ে শ্রমিকের মজুরি খরচই প্রায় ৮৫ শতাংশ পড়ছে।
মোটামুটি হিসাবে দেখা যায়, এক মণ পাট করতে কমপক্ষে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে বর্তমানে বাজার মূল্য মানভেদে দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। তাহলে কৃষকের কী থাকে? তাই পাট চাষিদের বাঁচাতে এবং পাটের রপ্তানি আরও বাড়াতে হলে, পাটের দামের বিষয়টি সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া প্রয়োজন।
পাশাপাশি পচনপানি ও পাট শুকানোর জন্য সরকারের প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায়ই বাংলাদেশের পাট গবেষণা আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। পাটের জিনোম আবিষ্কৃত হয়েছে। রোগমুক্ত ও অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তবে বাংলাদেশ কার্যকর গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে।
তাই কাজেই গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ে আমাদের অধিক নজর দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার। বিশ্বে পাটের চাহিদা মূল্যায়ন, নতুন চাহিদা সৃষ্টি এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করাও জরুরি। পাটপণ্যের বহুমুখীকরণের প্রতি আরো বেশি দৃষ্টি দেওয়া হোক এবং বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হোক।