শিক্ষক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে দেশের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা। দেশে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনে থাকা সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক ও শিক্ষক নেই। বর্তমানে দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৭-এ। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এসব চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে চার সহস্রাধিক।
যদিও এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য শিক্ষক আছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ঘাটতি কারণ জানতে গিয়ে জানা গেছে মেডিকেলের পরিভাষায় বেসিক সাবজেক্ট হিসেবে পরিচিত কিছু বিষয়ে ছাত্র শিক্ষক কিছুই পাওয়া যায় না। সরকারি মেডিকেলে বেসিক সাবজেক্ট বা মৌলিক বিষয়গুলোতে প্রায় দুই হাজার পদের মধ্যে সাতশোর বেশি পদ শূন্য রয়েছে।
মেডিকেল কলেজগুলোয় সবচেয়ে বেশি সংকট অধ্যাপক পদে। রাজধানী ঢাকার ভেতরের কলেজগুলোতে প্রয়োজনীয় পদের বিপরীতে কিছু অধ্যাপক থাকলেও ঢাকার বাইরের কলেজগুলোতে অধ্যাপক যেন সোনার হরিণ। চিকিৎসকদের অনেকে অভিযোগ, নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়ার কারণে অনেক বিষয়ে উচ্চপদে শিক্ষক আসার সুযোগই পাঁচ্ছে না।
কিছু বিষয়ে কয়েকটি কলেজে শুধু প্রভাষক পদের শিক্ষক কাজ করছেন। এর উপরের পদগুলোতে নিয়োগের জন্য লোকবলই নেই। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে বর্তমানে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৫ হাজার ৬৬৮টি। যার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ২ হাজার ৫৪৪টি পদ। সে অনুযায়ী সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় মোট পদের বিপরীতে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। দেশের নতুন-পুরনো সব সরকারি মেডিকেল কলেজেই এখন বিভিন্ন মাত্রায় শিক্ষক সংকট রয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় শুধু শিক্ষকের সংকট যে রয়েছে তা নয়, অবকাঠামো থেকে শুরু করে পরীক্ষাগার-হোস্টেলসহ সবকিছুতেই সংকট রয়েছে।
সরকার গত দেড় দশকে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। অধিকাংশ মেডিকেল কলেজেই স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে। লোকবল থেকে শুরু করে সব শাখায়ই ঘাটতি রয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সংকট দূর করা জরুরি। যেহেতু দেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান এখন সর্বকালের সর্বনিম্নে।
তাই জনগণের স্বাস্থ্য অধিকারের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত দ্রুত কলেজগুলোকে মানসম্পন্ন করা এবং ঠিকঠাক ভাবে কলেজে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হবে। তবেই এ সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।