দেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প। এ শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিকের শ্রম-ঘামে অর্জিত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতির বড় শক্তি। কিন্তু যাঁদের দিনরাত খাটুনিতে রপ্তানি বাণিজ্যের চাকা ঘুরছে, অর্থনীতি বড় হচ্ছে-সেই শ্রমিকদের কোনো উন্নতি নেই।
যেখানে বিশ্ববাজারের ৬ শতাংশের মতো তৈরি পোশাকের জোগান দিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এর বিনিময়ে আসে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ বৈদেশিক আয়। দেশের জিডিপিতে খাতটির অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। এ খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে ৪০ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
পোশাক খাতের প্রাণভোমরা তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। কিন্তু গত কয়েক দশকে তৈরি পোশাক আমাদের অর্থনীতির ভিত গড়ে দিলেও তার কারিগরদের আহামরি কোনো পরিবর্তন আসেনি। তারা যে মজুরি পান তা দিয়ে নিজেদের জীবনযাপন ব্যয় মিটিয়ে পরিবারের দেখাশোনা কঠিন।
এর মধ্যে দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি বেলাগাম। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতে যে নূন্যতম মজুরি দেয়া হচ্ছে তাতে অধিকাংশ কর্মীর জীবন কঠিন। তাই মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন পোশাকশ্রমিকেরা। গাজীপুরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ আশুলিয়া, সাভার হয়ে মিরপুর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল।
শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন পুনরায় নির্ধারণ করার নিয়ম রয়েছে। তবে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কত হবে তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। এরইমধ্যে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
একে অযৌক্তিক দাবি বলে উল্লেখ করেছে বিজেএমইএ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে শ্রমিকরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ফলে সমস্যার সমাধান না করে মালিকপক্ষ ও সরকার পুলিশ ও সরকারদলীয় গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। এতে অন্তত দুজন শ্রমিক জীবন দিয়েছেন।
শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তাদের এ দাবি পূরণ করা না হলে আন্দোলন থেকে সরবেন না এবং নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই সরকারকে আহ্বান করবো সামনে যেহেতু নির্বাচন এবং খুব দ্রুতই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে শ্রমিকদের বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা শ্রমিকরা যদি অস্বস্তিতে থাকেন তাহলে স্বস্তিতে থাকবে স্বর্ণ ডিম্ব দেয়া খাতটি। তাই স্থিতিশীল তৈরি পোশাক খাত এবং স্থিতিশীল শ্রমবাজার তৈরিতে এ খাতের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে।