হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকুরীসহ নানান সরকারী অনুদান পাইয়ে দেয়ার নামে ইউএনও’র বোন পরিচয়ে প্রতারনা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক স্বপ্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ইউএনও অফিস ঘেরাও করেন ভুক্তভোগি ও হতদরিদ্র নারীরা।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারক লিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা। অভিযুক্ত প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে। অভিযোগ ও ভ্ক্তুভোগিরা জানান, গ্রামীন হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বালম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে শেলাইসহ নানান প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার করে সম্মানি দেয়ার নাম করে জন প্রতি ২/৩ হাজার করে কয়েক শত নারীর কাছে টাকা নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না।
একই সাথে নারীদের মহিলা বিষায়ক, সমাজসেবা, সমবায় ও যুবউন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন সরকারী ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৪/৫ হাজার করে টাকা আদায় করেন তিনি। নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) বোন পরিচয় দিয়ে গ্রামীন নারীদের সাথে প্রতারনা করে কোটি টাকার উপর হাতিয়ে নেন। প্রথম দিকে নিজেকে ইউএনও’র বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ চালু করেন। যা দেখে গ্রামীন নারীরা সত্য বলে মেনে নিয়ে তার প্রতারনার ফাঁদে পা বাড়ায়।
এভাবে পুরো উপজেলায় জাল বিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। গত ৩/৪ মাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিক অবগত করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে থেকে স্বপ্নার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। পরে প্রতারক স্বপ্ন কৌশলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ বাড়ি আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় স্থান্তারীত করেন। এরই মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নেয়া নারীদের প্রশিক্ষনের ৩ মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানী পান নি।
ফলে সম্মানী নিয়ে নারীদের সাথে কয়েক দফায় মারামারীর ঘটনা ঘটে স্বপ্নার। প্রতিবাদকারী নারীদের সায়েস্তা করতে স্বপ্নার রয়েছে নিজেস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। এতেই শেষ নয়, অনেক বেকার নারীকে সরকারী চাকুরী পাইয়ে দেয়ার নাম করে ৪/৫ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে স্বপ্না সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকট আত্মীয় পরিচয় দিতেন বলেও ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেন।
চাকুরী, সরকারী অনুদান বা প্রশিক্ষনের ভাতা না পেয়ে এক পর্যেয় ভুক্তভোগীরা তার প্রতারনার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বারাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতারক স্বপ্নার প্রতারনা বন্ধ না হওয়ায় ভুসে উঠে নারীরা। প্রতারীত ভুক্তভোগী শত শত হতদরিদ্র নারী মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে প্রথমে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে থানার গেটে মানববন্ধন করে প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন। ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন শেষে নারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদিতমারী ইউএনও অফিস ঘেরাও করে দ্রুত প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন। এ সময় একই দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলীপি প্রদান করেন ভুক্তভগীরা। ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, প্রশিক্ষণে সম্মানী ও সরকারী অনুদান দেয়ার নাম করে স্বপ্না ইউএনও’র বোন ও মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে টাকা নেন। ইউএনও’র বোন জন্যই স্বপ্না মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অফিস করেছিলেন। এটাই আমাদেরকে বলে প্রতারনা করেছিল। ইউএনও’র বোন ছাড়া সরকারী অফিসে তার প্রশিক্ষণ হত না। এটা ভেবে আমি টাকা দিয়েছি। এ ছাড়া অভিযোগ দিয়েও যখন তার প্রতারনা বন্ধ হয়নি। তখন আমরা ভেবেছি, হয়তো স্বপ্না ইউএনও এবং মন্ত্রীর আত্মীয় হবে। অভিযুক্ত নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে একাধিকবার ফোন করেও তিনি রিসিভ করেন নি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার রশিদা বেগম বলেন, আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি স্বপ্নার মায়ের। ৪ মাস আগে প্রতারনার বিষয়টি জানতে পেয়ে তার মাকে এ ব্যানার ব্যবহারের নিষেধ করা হয়। পরে তারা ব্যানার ছাড়াই এসব প্রতারনা করছে। তাদের কোন ফান্ড বা প্রজেক্টও নেই। এটা তাদের প্রতারনা বলে মনে হয়েছে এবং ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন, স্বপ্না প্রতারনা করতে বোন পরিচয় দিতে পারে। বোন তো দুরের কথা তাকে আমি চিনিও না। প্রতারনা একটি ফৌজদারী অপরাধ। তাই ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্মারকলীপি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।