চালের বাজার গত কয়েক মাস স্তির থাকার পর ফের দাম বাড়ার তালিকায় উঠে এসেছে প্রধান খাদ্যশস্য চাল। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তাতে খুচরায় কেজিতে ৪ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই।
তবে চালের দাম বাড়ায় বড় চাপে পরেছেন ক্রেতারা। নিত্যপন্যের বাজারে অস্থিরতা কমছে না। চাল ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা (মিল মালিক) বলছেন, অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বাজারে নতুন চাল এলে তখন দাম কমে আসবে। তবে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অজুহাত থাকেই। চালের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, মিল মালিকদের কারসাজিতে নতুন করে চালের বাজারে এই অস্থিরতা।
নানা অজুহাতে তাঁরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায়ও এর প্রভাব পড়েছে। বাজারে নতুন চাল না আসা পর্যন্ত এই দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এরইমধ্যে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। ফলে এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তার পরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এতে করে মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি আঘাত করছে, আর এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। তারপরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হতে পারে।
সে ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রার বিনিময় হার ও সুদহার বাজারভিত্তিক করতে হবে। মুখে নয় কাজেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আমরা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দেখতে চাই। বাংলাদেশের বাজারে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট সব সময় সক্রিয়।
তাই টিসিবিকে সক্রিয় করে খোলাবাজারে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে নিয়মিত চাল বিক্রির উদ্যোগ এখনই নেওয়া গেলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব হতে পারে। এ ছাড়া মনিটরিংয়ের অভাবেও অনেক সময় বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে এ থেকে দ্রুত উত্তরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করছি, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে।