বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সব সম্প্রদায়ের জন্য সে অধিকার প্রতিষ্ঠা বাস্তবে সম্ভব হয়নি। যার অন্যতম উদাহরণ হলো হরিজন সম্প্রদায়। অস্পৃশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের গান্ধীজির দেওয়া নাম ‘হরিজন’। হরিজন শব্দটির অর্থ ঈশ্বরের সন্তান। দেশের শহর, বন্দর কিংবা গ্রাম-গঞ্জে যারা ময়লা-আবর্জনা ও মলমূত্র পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত-সেই মেথর কিংবা ঝাড়ুদারকে হরিজন বলা হয়ে থাকে।
তারা সামাজিকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত একটি জনগোষ্ঠী। দেখা যাচ্ছে যথাযথ সুযোগ সুবিধার অভাবে বাংলাদেশের দলিত, হরিজন জনগোষ্ঠী ধীরে ধীরে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন এবং নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হরিজনরা শহরের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ভোর সকালে তারা ঝাড়ু, বেলচা আর ট্রলি হাতে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। হরিজনরা আঠারো শতকের প্রথম দিকে ভারত উপমহাদেশের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্ববঙ্গে আসে।
তৎকালীন জমিদার ও ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা অন্ন ও বাসস্থানের লোভ দেখিয়ে তাদের নিয়ে আসেন। এরপর তারা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই হরিজনদের বড় পল্লী রয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী হরিজন সম্প্রদায়ের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সেই সংখ্যা আনুমানিক ৩০ লাখ হবে। ১৯৯১ সালে আদমশুমারিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকায় প্রথম হরিজন নামটি পাওয়া যায়। ব্রিটিশ আমলে জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কয়েকটি তেলেগু পরিবারকে ঢাকায় আনা হয়। একসময় তারা এ দেশের নাগরিক হয়ে যায়।
সমাজে প্রচলিত জাতিভেদ প্রথার কারণেই মূলত দেশের সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে হরিজন সম্প্রদায়। এমনকি হরিজনদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তারা পাননি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট, তাদের দেয়া হয়নি কোন ভাতা। দেখা যায় দেশের হরিজন জনগোষ্ঠীর নারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। বাল্যবিবাহ, মাতৃত্বকালীন জটিলতা, মাতৃমৃত্যু, পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণসহ নানা সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয় তাদেরকে। একবিংশ শতাব্দীকে এসেও অস্পৃশ্য হরিজন সম্প্রদায়।
যেন তারা মানুষ নয়, হরিজন। এমনকি অনেক সময় দেখা যায় এদের সঙ্গে সমাজের সাধারণ মানুষ মিশতে চায় না। তারা হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টে বসে অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো একসঙ্গে বসে খেতে পারে না। অনেক সময় তাদের হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই দেওয়া হয় না। পাশাপাশি দেখা যায় হরিজন সম্প্রদায়ের মাঝে আবাসন সমস্যা প্রকট। লোকসংখ্যা বাড়ার অনুপাতে তাদের আবাসন বাড়ে না।
আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের বসবাসরত এলাকায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর থাকে না। ফলে তাদের বসবাস করতে হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। হরিজন পল্লী বাংলাদেশের বাইরের কোন এলাকা নয়। হরিজনরাও আমাদের দেশের, সংস্কৃতিরই একটি অংশ। দেশের একটি অংশকে বাদ রেখে কখনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের জন্য তৈরি করে দিতে হবে অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করার সুযোগ।
প্রধান কার্যালয়ঃ বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
কর্পোরেট অফিসঃ
চৌধুরী ভিলা, বাসস্ট্যান্ড, জলঢাকা, নীলফামারী।
ইমেইলঃ bdbidrohinews@gmail.com
চৌধুরী মিডিয়া গ্রুপ এর একটি প্রকাশনা
© All rights reserved
Copyright © 2024 বিদ্রোহীনিউজ. All rights reserved.